নূর চৌধুরী।।
রোকেয়া আপা আমন্ত্রণ জানানোর সময়ই জানিয়েছিলেন সবাইকে কবিতা পড়ার সময় দিতে পারবেন না। রাজী হয়েছিলাম বটে তবে ভেতরে খচ খচ করে থাকে সুক্ষ্ম বেদনার পিন। এতো গুণী মানুষের সামনে নিজের একটা কবিতা পড়ার আকুতি।
আজ কবিতা পড়বেন সদ্য আগরতলা ভ্রমণ করে আসা কবিগণ।
যারা কোন কারণে আগরতলা প্রেসক্লাবে কবিতা পড়তে পারেনি, আর আগরতলা থেকে আগত কবিগণ।
কবির বেদনা বুকে নিয়ে কান উঁচিয়ে মঞ্চে চোখ রাখি, গিটার বাদন শুনি কবিতা শুনি। মুগ্ধ হতে থাকি। নৃত্য পরিবেশনা সঙ্গীতে মুগ্ধ হই।
এবার চতুর্থ পর্ব।
আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রশিকা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সাহিত্য সংস্কৃতি আনন্দ বিনোদনের মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজ তথা দেশ উন্নয়নে বিকল্প নেই।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নসহ অনেক সুকর্ম করে রক্তক্ষয়হীন সমাজ বদল করছে প্রশিকা।
প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের আছে খুবই শক্তিশালী গণ সংস্কৃতি বিভাগ। এর কর্মীরা প্রশিক্ষিত দক্ষ যোগ্য এবং দেশপ্রেমিক।
তৈরি আছে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন কালচারাল প্রোগামের একটি দল।
স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের বাস্তব ঘটনায় নির্মিত মঞ্চায়ন পিয়ার চাঁদ বিবির পালা।
রচনা কুমার প্রীতীশ বল নির্দেশনায় দেবাশীষ ঘোষ গায়েন কাজী শিলা। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজি শিলা তার অভিনয় কৌশল আর সাহসিকতা দিয়ে পুরো দেড় ঘন্টার নাটকটিকে উপহার দিয়েছেন যেখানে মুগ্ধতায় পুরো হলরুম ছিল নীরব। পিনপতন নিরবতায় অনুভব করলাম এতোক্ষণ কি দেখলাম কি শুনলাম। অভিনয় না বাস্তব!
হলের প্রতিটি দর্শক এমন নিবিষ্ট মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করলেন পালাটি।
আপ্লূত বিমুগ্ধ বিমোহিত!!
পালা শেষে সবাই অভিনেতা বিশেষ করে অভিনেত্রী কাজী শীলার সাথে ছবি তোলার জন্য ছুটে যায়।
প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলাম উপ প্রধান নির্বাহীদ্বয় কামরুল হাসান কামাল আবদুল হাকিম এবং চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম তাদের ঘিরে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক চলতে থাকে। প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলাম কিছুটা নির্মোহ মানুষ তিনি কাজকে প্রাধান্য দেন বলেই প্রশিকা ঘুরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি ছুটেন গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের নিয়ে ডাইনিং হলে। তবে উপ প্রধান নির্বাহীদ্বয় আর চেয়ারম্যানের মুক্তি মেলে না ছবি শিকারীদের কবল থেকে।
চমৎকার পারিবারিক পরিবেশ সকল কর্মীদের মাঝে।
কিছুক্ষণ পর খেয়াল করি বুকের ভেতর খচ খচে কাঁটা নেই। কবিতা না পড়ার দুঃখ ভুলে গেছি এতোক্ষণের মাধুর্যময় নান্দনিক আয়োজন দেখে।
ছবি তোলা শেষে ডাইনিং হলে ঢুকি। পুরো হলঘরে জুড়ে সুখাদ্য সুঘ্রাণে মৌ মৌ করছে।
পাঁচ রকমের ভাজা মিশেল সবজি পাতলা ডাল সর্ষে ইলিশ দেশি মুরগীর মাংস সাদা ভাত সালাদ।
সবাই প্রচন্ড ক্ষুধার্ত, লোভনীয় খাবারে মন সবার।
মামুন ভাই আগেই বলেছে রোকেয়া আপা আনন্দে খেতে পারে না, খেয়াল করছি কথাটা সত্য ।
দুপুর থেকে কয়েক ঢোক পানি আর চড়ুই পাখির মত কিছু মুখে তুলেছেন, তবুও কি ঝলমলে মুখ।
কোথায় তার খাবারের প্লেট কোনটা তার চেয়ার কে জানে, সে সব টেবিলে ঘুরে সবার খবর নিচ্ছে।
অতিথিদের টেবিল ঘুরে আমাদের টেবিলেও এলেন, অমলিন হাসি লেখক কবি প্রশিকার চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলামকে মানায়।
প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলাম উপ প্রধান নির্বাহীদ্বয় এবং মিজান ভাই কালাম ভাই শাহীন ভাইসহ সকলেই ঘুরে ঘুরে অতিথিদের খাবারে তদারকি করছেন।
বাঙালিয়ানা সুস্বাদু খাবারে উদরপূর্তি করে বাহনের কাছে আসি।
প্রশিকার ঊর্ধ্বতন কর্মীরা তখনও অভুক্ত তবুও অতিথিদের প্রতিটা বিষয়ে খেয়াল রাখছেন চুলচেঁড়াভাবে।
গাড়ি চলতে শুরু করে ঢাকার পথে আমাদের সকলের অন্তরে জেগে রইলো প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের অনন্য অসাধারণ আয়োজন।
নিপুন দক্ষতার পরিচালনা পরিষদ যাদের সাহসী পদক্ষেপ এগিয়ে চলছে প্রশিকা।
আমাদের অপেক্ষা আবার কবে রোকেয়া ইসলাম আমন্ত্রণ জানাবে এমন উজ্জীবিত আনন্দে দৃষ্টি খোলা বিনোদনে।
অপেক্ষায় থাকলাম প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলাম উপ প্রধান নির্বাহী কামরুল হাসান কামাল কবি নাসির আহমেদ এবং চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলামের অঙ্গীকারকৃত পত্রিকা ও দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য উৎসবের।
কবি ও কথাসাহিত্যিক রোকেয়া ইসলাম বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সন্মেলনে যোগ দিয়েছেন দিল্লি নেপালে তিনি সদর্পে অংশ নিয়েছেন, ফেসবুকে আমরা ছবি দেখেছি।
কবে আসবে সেই মহামাহেন্দ্রক্ষণ, সার্কভূক্ত দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন সেই দেশের সৃষ্টিশীল মানুষেরা স্বাগতিক দেশ হিসাবে থাকবে বাংলাদেশের স্বনামধন্য সংস্থা প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র।
গাড়ি চলছে রাতের প্রহর ভেঙে প্রশিকা এগিয়ে চলছে সকল বাঁধা অতিক্রম করে একদল সাহসী সৈনিকের হাত ধরে।
গাড়ির ভেতরে এমন কথার প্রতিধ্বনি হচ্ছে।
Leave a Reply